‘ফুল গাছটি লাগইছিলাম ধুলা মাটি দিয়া রে
সে ফুল ও ফুটিয়া রইলো অগম দইরার মাঝারে’
আবছায়া ঘুমের ঘোর। কিছু নাগরিক জঞ্জাল জমে রয়েছে স্বপ্নের অলিতে গলিতে। সেই গলিতে হাটতে হাটতে একটা গান ভেসে এলো।
‘সমুদ্র কিনারে বসে জল বিনে চাতকই মরলো’, এ তো সাঁই জির গান, অন্তরার কথাগুলোর দিকে মন ধেয়ে গেল, লিখছেন, ‘চাতক থাকে মেঘের আশে, মেঘ বরিষে অন্য দেশে, বলো চাতক বাঁচে কিসে,ওষ্ঠাগত প্রাণ আকুল’।
এই অন্বেষণ ছিল ঘুমের গভীরে, জানলারা তাকিয়ে ছিল সহজের দিকে। এর চেয়ে সহজ আর কী হতে পারে? বন্ধুরা মিলে যখন ঝুমুর গানটা গাইলাম, যখন উল বুনতে বসলাম, দেখলাম উল বোনা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। দেখলাম সাজার সাথে পরিমাণ মতো দুধ ও রয়েছে, তবু হাজার চেষ্টা করেও একটা সঠিক মাপের জামা তৈরি হচ্ছে না। অনেক চেষ্টা করেও দই আর পাতা হচ্ছে না। হওয়ার কথাও নয়, এতো জঞ্জাল চারিদিকে। মনসুর ফকির বললেন, ‘আমার নিতাই চাঁদের দরবারে, গৌর চাঁদের বাজারে, এক মন যার সেই যেতে পারে’, কী সহজ ভাবে বলা।
আমরা গাইলাম, ‘সরপে সরপে যাবো, বাছে বাছে টুপা লিবো, সেই টুপায় চাল ভাজা খাবো রে, সফল জনম আর কী পাবো, সফল জনম আর কী পাবো?’
কাব্য করে লিখতে চাইছি না, তবে এই একটা গান আমাদের মনের নীল দিগন্তে ফুলের আগুন লাগিয়েই দিলো, সেই আগুন এ বিনি সুতার মালা গাঁথার মর্মর ধ্বনি আছে। আমাদের গাওয়া ঝুমুর গানের সহজ কথার মধ্যে এতো কিছু খুঁজে পাবো সত্যি ভাবিনি। গাইলাম, ‘ আম গাছে আম নাই, কুটা কেন লাড়ো রে, তুমার দেশে আমি নাই, আঁখি কেন ঠারো রে’, এই কথার পাশাপাশি আর একটা কথা খুব মনে হচ্ছিল, ‘আমি তারেই খুঁজে বেড়াই, যে রয় মনে, আমার মনে। সে আছে বলে আমার আকাশ জুড়ে ফোটে তারা রাতে, প্রাতে ফুল ফুটে রয় বনে,আমার বনে’, লিখছেন রবীন্দ্রনাথ। ঝুমুর বিখ্যাত হয়েছে তার সহজ ভাষা, সুন্দর ছন্দ ও এক অদ্ভুত সারল্যের হাত ধরে। সেই একটা ঝুমুর গানে যে এমন দর্শন লুকিয়ে থাকতে পারে, সেই সমুদ্রের এক ফোঁটা জল পেয়ে আমরা ধন্য, এই গানের রচয়িতার নাম জানা যায়না, সেটা আমাদের দুর্ভাগ্য। গানের লিঙ্ক দেওয়া রইলো।