আমরা প্রতিনিয়তই কিছু না কিছু হারাচ্ছি। হয়তো কোনো মানুষ কে, হয়তো নিজেদের স্বপ্নগুলো কে, হয়তো নিজেদের ভেতরের সরলতা কে। এই সব কিছুর সাথে আমরা যেটা হারাচ্ছি সেটা হলো শব্দগুলো। আমাদের মাতৃভাষার শব্দগুলো। আসলে সব কিছুই তো আমাদের ভাষাটার সাথেই জড়িয়ে আছে। দৈনন্দিন জীবনের লড়াই, দুঃখ আনন্দ সব কিছুরই প্রকাশ এই ভাষার মাধ্যমেই। আবার কিছু মজার শব্দও আছে। আমার কোন শব্দ গুলো ভালো লাগে জানিস? ‘আরে ধুর’ , ‘ধুত্তেরিকা’, ‘ধ্যাত্তেরিকা’ এই শব্দ গুলোয়ে একটা অদ্ভুত সুন্দর ধ্বনি তৈরি হয় যাতে বেশির ভাগ সময় বিরক্তি আর ভালোবাসা একসাথে মেশানো থাকে। তুই যখন বলিস, ‘কবে দেখা করবে?’ খুব আনন্দ হয়, হয়তো তখন দেখা হবেনা বা হয়তো আর কোনোদিন দেখা হবেনা, তবু ওই আনন্দের মধ্যে কোনো জঞ্জাল থাকে না। এই ‘দেখা হবে’, ‘আবার দেখা হবে’ এই কথা গুলোর মধ্যে একটা অদ্ভুত টান আছে যা মন কে অনাবিল আনন্দ দেয়। এই আনন্দ টা অনেক সময় দেখা করার আনন্দের চেয়েও অনেক বেশী। আবার যখন দূরত্ব বেড়ে গিয়ে যোগাযোগ নিভে যেতে চায়, তখন মনে হয় কখন মানুষটাকে দেখতে পাবো, সেই অনুভূতির শব্দ গুলোও বড়ই সুন্দর। আমরা বলি, আকুলতা। ব্যাকুলতা। প্রত্যেক মানুষেরই তো কিছু ব্যাকুলতা থাকে কিছু শব্দ বন্ধু থাকে যারা পাশে এসে দাঁড়ায়, একটা অনুভূতি ব্যক্ত করতে সাহায্য করে। এই সেদিন যখন তুই বললি, ‘তোমায় জড়িয়ে ধরে কাঁদতে ইচ্ছে করছে’, আমার মনে হলো এই কথাটা তো আমিও বলতে চাইছিলাম, আমিও কাঁদতে চাই, অনেক কিছু জমে আছে ভেতরে, আর রাখতে পারছিনা। কাঁদলে যদি একটু হালকা হওয়া যায়। আমরা তো এই শব্দ গুলোর মতো আমাদের কান্না টাও হারিয়েছি বল? এ তুমি কেমন তুমি চোখের তারায় আয়না ধরো, এ কেমন কান্না তোমার আমায় যখন আদর করো, এই কথা এই শব্দ আর কে লিখবে বল তো! অশ্রু শব্দ টা কি সুন্দর না? হারিয়ে ফেলেছি আমরা, যেমন যায় সব হারিয়ে। অশ্রুসিক্ত কথা টাও কী সুন্দর না? আর আমার সব চেয়ে প্রিয় শব্দ কোনটা জানিস? বলা হয়নি তোকে কোনোদিন, কিন্তু এত হাজার হাজার শব্দের মধ্যে এই শব্দ টাই আমার সব চেয়ে প্রিয়। ‘বন্ধু’, এটাই আমার সব চেয়ে প্রিয় শব্দ। অনেকে বলে বন্ধুত্ব নাকি সত্যি নয়, সব নাকি কেটে যায় সময়ের সাথে, ‘বন্ধু’ আর ‘বিচ্ছেদ’ নাকি কয়েনের এপিঠ আর ওপিঠ। কিন্তু আমি দ্বিমত পোষণ করি। ওই যে ছেলেটা হাতে বন্দুক তুলে নিচ্ছে ওর হয়তো সত্যি কোনো বন্ধু নেই যে বোঝাতে পারে, বা যে বুকে টেনে নিতে পারে। এই যে তুই এতো দূরে আছিস, হয়তো আমার চিঠি পড়ছিস কোনো নিরালা বিকেলে, কে বলতে পারে? হয়তো এই মুহূর্তে এই চিঠিটাই তোর সব চেয়ে বড় বন্ধু। বন্ধু তো সব সময় কোনো মানুষ নাও হতে পারে। একটা কবিতা, একটা গান, একটা না পাওয়া, একটা কাছে আসা, একটা নৈঃশব্দ্য, একটা পাহাড়, একটা ভোর, একটা যাত্রা, একটা সময়, একটা সূর্যাস্ত, একটা মন, একটা ভাবনা, একটা যন্ত্র, একটা গাছ, একটা ঋতু, একটা ছবি, একটা বিচ্ছেদ, একটা নদী, একটা দেশ, একটা চেতনা, একটা পাগলামী সব কিছুই বন্ধু হতে পারে। তাই বন্ধু ভাবনা টাকে ঠিক একটা ছোট গন্ডি তে বাঁধা যাবেনা। অনেক কথা বলে ফেললাম, এত কিছু বলতে চাইনি, বিশ্বাস কর! কিন্তু তোকে এত দিন পর লিখছি বলে সামলাতে পারিনি। এত শব্দ এত আবেগ বুক চিরে বেরিয়ে এলো। এগুলো যত্নে রাখিস বন্ধু। ভালো থাকিস বন্ধু। আবার দেখা হবে।